অসুরবিনাশিনী নয়, এই বাড়িতে দেবী দুর্গা আসেন সর্বমঙ্গলা রূপে

ইতিহাস

ইতিহাস

স্বর্গীয় ধীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এই পূজার প্রথম সূচনা হয় হাওড়া জেলার ঝিকিরা গ্রামে। আনুমানিক ৮০ বছর আগে ১৯৪১ সালে এই পূজার সূচনা হয়।তবে সময়ের পরিবর্তনে পরিবারের সকল সদস্যরা বর্তমানে হাওড়ার বকুলতলা লেনে রামরাজতলা এলাকায় চলে আসে। ২০০৫ সালে দুর্গা পুজো শুরু হয় ঘট ও মা এর পট চিত্রে ও নবপত্রিকা তে। ২০০৯ সালে মৃন্ময়ীরূপে মা এর আগমন চক্রবর্তী বাড়িতে তারপর থেকে বর্তমান বাড়িতে পুজো হয়ে আসছে।
এবার একটু বলা যাক বাড়ির পূজা সূচনার বিষয়টি।

পূজার সূচনা

পূজার সূচনা

পূজার সূচনার বিষয়টি বলতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে প্রায় ৬০ বছর পিছনে।পুরাকালে মা কালীর স্বপ্নাদেশ এই বাড়িতে স্থাপন হয় বুড়িমার ও মা মঙ্গলা কালীর মন্দির। মায়ের স্বপ্নাদেশে এখানে দুর্গার পূজা শুরু হয়। প্রথমেই বাড়িতে পটে পুজা হতো। তবে পরবর্তীতে মা মঙ্গলার নির্দেশে পরবর্তীতে মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তি পূজা শুরু হয়।পূর্বে নিজ গৃহেই প্রতিমা তৈরি হতো তবে কর্মব্যস্ততায় জীবনের ফলে এখন প্রতিমা কুমোরটুলি থেকে আনা হয়। রথের পরে যে প্রথম শনিবার আসে সেই দিন মূর্তির মূল্য পূজার মধ্য দিয়ে মায়ের পূজার সূচনা হয়। তারপর মায়ের মূর্তি তৈরি শুরু হয় বর্তমানে কুমারটুলির মহিলা শিল্পী কাকুলি পালের হাতে।

বাড়ির নিয়ম

বাড়ির নিয়ম

এবার বলা যাক বাড়ির মূল পূজা সম্পর্কে,বাড়ির নিয়ম অনুযায়ী মহালয়ার আগের দিন অর্থাৎ মাতৃপক্ষ শুরুর আগের দিন কুমোর শালা থেকে বাড়ির গর্ভগৃহে ( গৃহমন্দিরে ) মূর্তি আনায়ন করা হলেও দেবীর বোধন হওয়ায় মহাষষ্ঠীতে। বাড়ি ব্রাহ্মণ বংশ জাত হ‌ওয়ার কারণে পরিবারের সদস্যরাই এই পূজার মূল পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করে আসেন। আর পাঁচ দিন ধরে মায়ের বিশেষ পূজা চলে সম্পূর্ণ শাক্ত মতে। বাড়ির নিয়ম অনুযায়ী এখানে নবপত্রিকা শান বাড়ির মধ্যেই সম্পন্ন হয়। সপ্তমীতে দেবীকে দেওয়া হয় অন্নভোগ এবং সাথে থাকে শুক্ত, ভাজা, আলু ভাজা ,আলুর দম, ডাল এবং বড়ির ঝাল তরকারি , পরমন্ন, চাটনি দই , মিষ্টি , পান যেটা এই বাড়ির বিশেষত্ব। এবং অষ্টমীতে থাকেন লুচি ,আলুর দম, ফুলকপির ডালনা, সুজির পায়েস, চাটনি ও মিষ্টি এবং নবমীতে হয় পোলাও, আলুর দম ,পনিরের তরকারি, চাটনি, পরমান্ন এবং দশমীতে মায়ের কোন অন্নভোগ হয় না সেদিন দেওয়া হয় দোধিকর্মা ( দই , চিড়ে , মুড়কি মিষ্টি )। মা এর স্বপ্নাদেশে এই বাড়ির বিশেষত্ব ও মাএর প্রধান ভোগ হলো চিরে র মুড়কি যেটা অন্ন ভোগ এর আগে নিবেদন করা হয়, এটা মহা সপ্তমী অষ্টমী ও নবমীতে নিবেদন করা হয় ।

বলিদান

বলিদান

বৈদিক শাস্ত্র মতে দুর্গাপূজার বলির পাঠা কথা থাকলেও এই বাড়িতে কোন দিনই বলি হয় না ,বলির বদলে দেওয়া হয় মাকে বিল্ব পত্রের মাল্য , আর এটি সন্ধিপুজতে অনুষ্ঠিত হয়। বাড়ির নিয়ম অনুযায়ী দশমীতে অপরাজিত পূজার পর ব্রাহ্মণ নবপত্রিকা ও মায়ের স্নান দর্পণ, একটি অস্ত্র ও বিল্লবাসিনি দুর্গা মাকে প্রতিষ্ঠিত জলাশয়ে বিসর্জন দেওয়া হয়। তারপর হাওড়া ময়দান সংলগ্ন গঙ্গার ( রামকৃষ্ণপুর ) ঘাটে দেবীর মূর্তিমান প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। বিসর্জনের পর গঙ্গার জল দেবী ঘটে ভোরে আনা হয় যা সারা বছর বড়ির গৃহ মন্দিরে মায়ের বেদীতে পূজা হয়। এইভাবে ধীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর পরবর্তী প্রজন্ম এই বাড়ির পূজার ধারক ও বাহক হয়ে আসছেন।

তবে দূর্গা পূজা পাঁচ দিন ধরে চললেও এই বাড়িতে সারা বছরই উৎসব লেগে থাকে, প্রতি আমাবস্যায় গৃহ মন্দিরে চলে বিশেষ পূজা এবং ভোগ নিবেদন। বৈশাখী আমাবস্যা চলে মা মঙ্গলা কালীর প্রতিষ্ঠাতা পূজা এবং হাজির হয় অজস্র ভক্তণন। এই ভাবে বংশপরম্পরায় মায়ের বিভিন্ন রুপে পূজা হয়ে আসছে এই চক্রবর্তী বাড়িতে। প্রতিবছর মা এর আরাধনায় মেতে ওঠে গোটা পরিবার। এই পরিবারে মাতৃ আরাধনায় আন্তরিকতা ও ভক্তিভাবের কোনো অভাব থাকেনা ।

Source link

Leave a Comment