গঙ্গায় ভেসে আসে কাঠের পাটাতন, স্বপ্নে আসে মূর্তির রূপ, শুরু হয় মহিষাসুরমর্দ্দিনীর পুজো

পুজোর ইতিহাস

পুজোর ইতিহাস

এখন থেকে ২৫৮ বছর আগে ১৭৬৪, মতান্তরে ১৭৬৮ সালে এই পুজো শুরু হয়। রানাঘাটের ঈশ্বরী প্রসাদ পালচৌধুরী নয়াগঞ্জে আড়ৎদারী করতেন ৷ ধার্মিক এই মানুষটি একরাতে মহিষমর্দ্দিনীকে স্বপ্নে দেখেন। ঘুম ভেঙ্গে পাশে গঙ্গায় গিয়ে দেখেন একটা কাঠের পাটাতন। কালনা পন্ডিতদের জায়গা। টোলের পন্ডিতরা তাঁকে এই পাঠাতনে মূর্তি তৈরী করে পুজো করতে বলেন। হঠাৎই রানাঘাটের ভবতারণ পাল স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে এখানে ছুটে আসেন। তিনি তাঁর স্বপ্নে দেখা দেবীর রূপ বর্ণনা দেন। বলেন তিনি প্রতিমা নির্মাণ করবেন।

মহিষাসুরমর্দ্দিনীর অর্থ কী?

মহিষাসুরমর্দ্দিনীর অর্থ কী?

দশভূজা মহিষাসুরমর্দ্দিনী দুর্গার মূর্তির দুপাশে স্থান পায় চামর ব্যজনরত দুই সখি, জয়া ও বিজয়া। জয়া পূজার মানে যশ ও জয় লাভ আর বিজয়ার চাওয়া হয় সুখ ও শান্তি। মহিষমর্দ্দিনী আরাধনার মাধ্যমে ভোগ তৃষ্ণা , কামনা ও ইন্দ্রিয় পরায়নতা মর্দ্দন বা দমন । মহিষাসুর তমো গুণের , সিংহ রজগুণ এবং দেবী সত্ত্বগুণের প্রতীক ।

  • “ম”- মকারঃ পাতু মাং দেবী চক্ষু যুগ্মে মহেশ্বরী।
  • “হি” – হিকারঃ পাতু বদনং হিঙ্গুলা সুরনায়িকা।
  • “ষ” – ষকারঃ পাতু মাং দেবী শ্বেতা জিহ্বায়াঞ্চাপরাজিতা।
  • “ম” – মকারঃ পাতু মাং দেবী মর্দ্দিনীকুলনায়িকা ৷
  • ” র্দ্দি” – র্দ্দিকারঃ পাতু মাং দেবী সাবিত্রী কালনাশিনী ৷
  • “নী” – নীকারঃ পাতু মাং নিত্যা হৃদয়ে রাহুপার্শ্বয়োঃ।

প্রতিমার চালচিত্রে স্থান পায় অনেক দেবদেবী।

মহিষমর্দ্দিনী আর অন্য দুর্গা পুজোর মধ্যে তফাৎ

মহিষমর্দ্দিনী আর অন্য দুর্গা পুজোর মধ্যে তফাৎ

মা মহিষমর্দ্দিনী আর অন্য দুর্গা পুজোর মধ্যে তফাৎ হল দুর্গা পুজো পৌরাণিক আর মহিষমর্দ্দিনী তান্ত্রিক পুজো। কালনার গঙ্গার ঘাটের কাছে তৈরী হয় হোগলা পাতার ছাউনি। সেখানে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে চলতে থাকে বাৎসরিক পুজো। অচিরেই তৈরী হয় সুরোম্য দেবী আটচালার দেবী মন্দির , নহবৎখানা , রন্ধনশালা , অতিথিশালা , যাত্রামঞ্চ ইত্যাদি। আটচালা দুই বাংলার সর্ববৃহৎ আটচালা। পরে এই পুজো হয়ে যায় সারা শহরের সর্বজনীন পুজো। সুন্দর নহবৎখানা তৈরী করেন স্থানীয় শিল্পী প্রিয়লাল মিস্ত্রী। লাখো ভক্ত সমাগম হয় চারদিনে পুজো দিতে। দন্ডিকাটা , পাঁঠাবলি হয় ৷

সপ্তমী ,অষ্টমী ও নবমীতে অন্নসূত্রে হাজার হাজার মানুষ পেট ভরে ভোগ খান। পুতুল নাচ , যাত্রা , তরজা , কবিগান সহ হয় হরেক আয়োজন। এখন ঠাকুর করেন পাটুলীর শিল্পী স্বপন পাল। দশমীতে লোহার চাকা লাগানো গাড়ীতে প্রতিমা সারা শহর পরিক্রমা করে ৷ মন্দিরের পাশেই মহিষমর্দ্দিনী ঘাটে বিসর্জন। মন্দির কমিটি ঠাকুরের পাওয়া শাড়ি অসংখ্য দুঃস্থ মহিলার মধ্যে জাতি – ধর্ম নির্বিশেষে বিতরন করেন।

যেভাবে যাবেন

যেভাবে যাবেন

কালনা শহরে ঠাকুরের নামে গড়ে উঠেছে বিদ্যালয় সহ নানা কিছু। নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছে ২৩ টি সিসিটিভি এবং ৪ টি এলই ডি । পুলিশ ছাড়াও রয়েছে মন্দিরের নিজস্ব শতাধিক নিরাপত্তা রক্ষী। কাটোয়া রেল লাইনের অম্বিকা কালনা স্টেশনে নেমে বা শিয়ালদহ লাইনের শান্তিপুরে নেমে গঙ্গা পেরিয়ে কালনার সুবিখ্যাত মহিষমর্দ্দিনী পুজো ও মেলায়।

মায়ের প্রার্থনা মন্ত্র –

নমো দেব্যৈ মহাদেব্যৈ শিবায়ৈ সততং নমঃ ।
নমঃ প্রকৃতৈ ভদ্রায়ৈ নিয়তাঃ প্রণতাঃ স্ম তাম্‌ ।। ৯

রৌদ্রায়ৈ নমো নিত্যায়ৈ গৌর্যৈ ধাত্র্যৈ নমো নমঃ ।
জ্যোৎস্নায়ৈ চেন্দুরূপিণ্যৈ সুখায়ৈ সততং নমঃ ।। ১০

কল্যাণ্যৈ প্রণতা বৃদ্ধ্যৈ সিদ্ধ্যৈ কুর্মো নমো নমঃ ।
নৈঋত্যৈ ভুভৃতাং লক্ষ্ম্যৈ শর্বাণ্যৈ তে নমো নমঃ ।। ১১

দুর্গায়ৈ দুর্গপারায়ৈ সারায়ৈ সর্বকারিণ্যৈ ।
খ্যাত্যৈ তথৈব কৃষ্ণায়ৈ ধূম্রায়ৈ সততং নমঃ ।। ১২

অতিসৌম্যাতিরৌদ্রায়ৈ নতাস্তস্যৈ নমো নমঃ ।
নমো জগৎপ্রতিষ্ঠায়ৈ দেব্যৈ কৃত্যৈ নমো নমঃ ।। ১৩

যা দেবী সর্বভূতেষু বিষ্ণুমায়েতি শব্দিতা ।
নমস্তস্যৈ (১৪) নমস্তস্যৈ (১৫) নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ১৬

যা দেবী সর্বভূতেষু চেতনেত্যভিধীয়তে ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ১৭-১৯

যা দেবী সর্বভূতেষু বুদ্ধিরূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ২০-২২

যা দেবী সর্বভূতেষু নিদ্রারূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ২৩-২৫

যা দেবী সর্বভূতেষু ক্ষুধারূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ২৬-২৮

যা দেবী সর্বভূতেষু ছায়ারূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ২৯-৩১

যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৩২-৩৪

যা দেবী সর্বভূতেষু তৃষ্ণারূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৩৫-৩৭

যা দেবী সর্বভূতেষু ক্ষান্তিরূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৩৮-৪০

যা দেবী সর্বভূতেষু জাতিরূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৪১-৪৩

যা দেবী সর্বভূতেষু লজ্জারূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৪৪-৪৬

যা দেবী সর্বভূতেষু শান্তিরূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৪৭-৪৯

যা দেবী সর্বভূতেষু শ্রদ্ধারূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৫০-৫২

যা দেবী সর্বভূতেষু কান্তিরূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৫৩-৫৫

যা দেবী সর্বভূতেষু লক্ষ্মীরূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৫৬-৫৮

যা দেবী সর্বভূতেষু বৃত্তিরূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৫৯-৬১

যা দেবী সর্বভূতেষু স্মৃতিরূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৬২-৬৪

যা দেবী সর্বভূতেষু দয়ারূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৬৫-৬৭

যা দেবী সর্বভূতেষু তুষ্টিরূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৬৮-৭০

যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৭১-৭৩

যা দেবী সর্বভূতেষু ভ্রান্তিরূপেণ সংস্থিতা ।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৭৪-৭৬

ইন্দ্রিয়াণামধিষ্ঠাত্রী ভূতনাঞ্চাখিলেষু যা।
ভূতেষু সততং তস্যৈ ব্যাপ্তিদেব্যৈ নমো নমঃ ।। ৭৭

চিতিরূপেণ যা কৃৎস্নমেতদ্‌ ব্যাপ্যা স্থিতা জগৎ ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৭৮-৮০

Source link

Leave a Comment